Table of Contents
জানাযা নামাজের নিয়ম /দোয়া/ফজিলত ২০২১ ।
প্রত্যেক প্রাণীকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । (সুরাঃ আল ইমরান, আয়াত ১৮৫) । তাই আমরা আজকে জানব যে কিভাবে একজন মৃত ব্যাক্তির জানাযা পড়তে হয় এবং এর জানাযা নামাজের নিয়ম ও দোয়া বা ফজিলত সম্পর্কে ।
মানুষ চিরজীবী নয় । প্রত্যেক মানুষেরএক দিন পরে যেতে হবে । যে শিশুরা আজ জন্ম হলো তাকেও একদিন না একদিন এই সুন্দর পৃথিবী ছাড়তে হবে, যেতে হবে পর । এই নির্দিষ্ট সময়ের পৃথিবীর মানুষের জন্য পরীক্ষা ।
কোন মৃত মানুষকে কবর দেওয়ার পূর্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রার্থনা কে জানাজা বলা হয় । সাধারণত এটি জানাজার নামাজ নামে অভিহিত হয় । মুসলমান অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলীদের জন্য এটি ফরজে কেফায়া বা সমাজের জন্য আবশ্যিক দায়িত্ব অর্থাৎ কোন মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাজার নামাজ পাঠ করতে হবে । তবে কোন এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় করা হয়ে যায় ।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যে মুসলিম মৃত্যু ব্যক্তির জানাযার নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছু শরিক করে নাই এমন ৪০ জন লোক নামাজ আদায় করবে তবে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন । ( মুসলিম)
জানাযার জন্য লাশ কিবলার দিকে রাখতে হবে । লাশ যদি পুরুষ হয় তবে মাথার পাশ বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন । আর যদি মহিলা হয় তবে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবে, এটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর সুন্নত ।
জানাযার নামাজঃ
জানাজার নামাজ একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে দলবদ্ধ ভাবে অনুষ্ঠিত হয় । অংশগ্রহণকারীরা বিজোড় সংখ্যক কাতারে এবং সারিতে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন । এটি ৪ তাকবীরের নামাজ । দাঁড়িয়ে এ নামাজ আদায় করতে হয় এবং সালাম ফিরানোর মাধ্যম দিয়ে নামাজ শেষ হয় । সাধারণত জানাজার নামাজের শেষে মুনাজাত দোয়া করতে হয় না কারণ ইসলামের প্রতিষ্ঠা বিধান অনুযায়ী নামাজের মাধ্যমে তাদের জন্য দোয়া করা হয়,আবার কেউ কেউ দোয়া করে এতে কোন সমস্যা নেই । জানাজা শেষে মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং ইসলামী রীতিতে কবর দেওয়া হয় ।
জানাজার নামাজের নিয়মঃ
চার তাকবীর এর সঙ্গে জানাজার নামাজ আদায় করতে হয় । ঈদের নামাযের তাকবীর দেওয়ার সময় হাত তুলতে হয় কিন্তু জানাজার নামাজের তাকবীর সময় হাত তোলা প্রয়োজন পড়ে না , আবার কেউ কেউ হাত তুলে এতে কোন সমস্যা নেই ।
ইসলামিক নাম অর্থসহ ছোট ছেলে শিশুদের ২০২১। ( Baby name/ baby bangla name 2021)
জানাজার নামাজের নিয়ত ঃ
নিয়তের বাংলা উচ্চারণঃ
“নাওয়াতুন আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরিফাতে আল্লাহু আকবার” ।
এখানে নিয়াতে, “লহাযাল মাইয়্যেতে” পুরুষ বা ছেলের লাশ হলে পড়তে হবে,। আর যদি লাশ মহিলা বা মেয়ের হয় তাহলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে “ ্বলতে হবে ।
নিয়ম আরবীতে পড়তে না পারলে বাংলায় বললে চলবে, আমি চার তাকবীরের সহিত ফরজে কেফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখি হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির পুরুষ বা মহিলা জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করেছে আল্লাহু আকবার ।
জানাজার নামাজে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা হয় বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়ত আনলেও চলবে ।
নিয়তে তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মত হাত বেঁধে নিতে হবে, হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে ।
সানাঃ
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা , ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ।
সানা পড়ার পরে তাকবীর বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে সেটা সাধারন নামাজের তাশাহুদ এর পর পড়া হয় ।
দরুদ শরীফঃ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ । আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ ।
দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাযার দোয়া পড়তে হয় ।
জানাযার দোয়াঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা কুয়া মাইয়্যেতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা । আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন ।
নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাযার দোয়া পড়তে হবে,
আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফফায়ান ।
নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাযার দোয়া ,
আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফাতারাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান । এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে একটি নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে ।
যদি কারও নামাজে আসতে দেরি হয়ে যায় তবে ইমাম সাহেব কে অনুসরণ করতে হবে । সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে , তা যদি সম্ভব না হয় তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজার নামাজ সম্পন্ন করতে হবে । জানাজার নামাজ জামাতে আদায় করতে হয় তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই । জানাজার নামাজের ফজিলতঃ ফরজে কেফায়া হওয়ার কারণে জানাজার নামাজ সমাজের কিছু মানুষ আদায় করলে দায় মুক্ত হওয়া যাবে । তবেকেউ আদায় না করলে এক সাথে সবাই পাপের ভাগীদার হবে । সমস্যা থাকলে বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে একই এলাকার অন্য কেউ নামাজ পড়লে গুনাহ হবে না ।
হাদিসে আছে, জানাজার নামাজে উহুদ পরিমাণ সাওয়াব আদায় হয় । তাই সুযোগ পেলেই নামাজ ছাড়া উচিত নয় । এছাড়া একজন প্রতিবেশী হিসেবে একজন আত্মীয় হিসেবে এ নামাজ আদায় করা মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য ।
আরও জানতে ক্লিক করুন
(-সুত্রঃ বুখারী,জানাযা অধ্যায় হা/১৩১৩২৭, মুসলিম, জানাযা অধ্যায় ,হা/৯৫১ )